রাজ যোটক শুনেছি , মণিকাঞ্চন যোগ শুনেছি কিন্ত মাধবি মুখার্জি , রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইলিশ ? এটা কে কি বলা যায় ?
পৃথিবী আমার মন কেমন কখন যে কোন পথে চলে কি যে বলে আমিও কি বুঝতে পারি ?
গুমো আঁচে নাকি সুন্দরি দের আরও সুন্দরি লাগে । ভুল । Induction কুকার এর সামনে ও ততোধিক ভাল লাগে। প্রমান ? – মাধবী দি। তার হাসিতে এখন ও চাপা দম্ভ ও এক মিষ্টি দুষ্টুমি – ঠিক যেমন চারুলতা র ছিল। আনারশি ইলিশ খুব জটিল রান্না নয় । যতক্ষণ রান্না চলল ততক্ষণ গল্প চলল। কেমন তিনি ইলিশ খেতে ভালবাশেন মুড়ো থেকে ল্যাজা । বাঁধা কপি ইলিশের মুড়ো দিয়ে করার সময় জিজ্ঞেস করলেন – বলুন তো মুড়ো টা কেন ভেঙ্গে দিলাম ? গালে ঈষৎ একটা টোল পড়লো । তারপর বললেন – সবাই কার পাতে যেন মুড়োর টুকরো পড়ে ।
টনসিল অবধি মাধুরি মুখার্জি , বাইশে শ্রাবন থেকে মাধবী । ‘ মনে কেমনে আজও লেগে আছে সেই কালো-মেয়ের-চুল-শুকনো-দুপুর-সেই-মেয়ের-আঙ্গুলে-তৈরি-কমলা লেবুর – কোয়ার – ফুল , সেই পঁচিশ বছরের মেয়ের আর্তি – বিয়ের পর আমাকে ভুলে যাবি না তো?
নারী ই নারী র সবচেয়ে বড় শত্রু আবার তারা ই পরম সই । আমরা সবাই তো এইসময় পাপ করছি কেন বলুন তো ? মাধবী দির এই প্রশ্নে আমাদের কোন উত্তর ছিল না । এই সময় যে ইলিশ মাছেরা আসে আর আমরা যাদের ধরে খাই – তারা বেশিরভাগ ই মহিলা এবং গর্ভবতী । আমাদের তো এটা করা উচিৎ নয় ।কিন্ত পুরুষ ইলিশ তো কেউ খায় না। পেছন থেকে কোন পুরুষের আত্মসমর্পণের উক্তি ভেসে এল – পুরুষ মানুষেরা কোনদিন ই কোনো কাজের নয় ।
ইলিশের পিঠে আগে খেয়েছি । ভাপা নারকল সরষে ইলিশের আবরণ টা কিসের ছিল তা নিয়ে অনেকক্ষণ তর্ক চলল। অনেক পূর্ববঙ্গীয় রা এক ই টেবিল এ থাকা স্বত্তেও কেউ বুঝতে পারেনি ওটা কচু পাতা । সব যখন শেষ করার আশা ছেড়ে দিচ্ছি তখন ই শেফ দিপ তাঁর সাক্ষর রেখে গেল । ইলিশ মাছের অম্বল আমি আগে খাইনি – কিনুত ইলিশ মাছ দিয়ে যে অম্ল মধুর এমনএক পদ বানানো যায় ্তা জানতাম না। আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম সব্বাই ওটা শেষ করে দিয়েছে । আমি এক বিরল প্রজাতি র ঘটি যে মিষ্টি খায় না বল্লেই চলে তাই ইলিশ মাছের পেটি মিষ্টি টা বাঙাল সহধর্মিণী র কুক্ষিগত হল ।
ইদানীং কালের খুব প্রচলিত একটি কথা আছে যেটা একজিকিউটিভ শেফ দীপ মিত্র ঠাকুর কে বলতে চাই – আপনি থাকছেন স্যার । আবার যাবো আবার খাবো । খুব শিগগিরি।
অনেক বার পাঁচ তারা হোটেল এ সবাইকার সঙ্গে ইলিশ খেতে গিয়ে দেখেছি সবাই অপেক্ষা করে কে প্রথম পাতে কাঁটা চামচ ছেড়ে হাত দিয়ে ইলিশ খেতে শুরু করবে । ইলিশ প্রেম যেমন হাতের স্পর্শ বিহীন পূর্ণতা পায় না তেমনি তার লেখা বাংলা ছাড়া হয় না । আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে , চক্ষুলজ্জা ভুলে যে ভাযায় প্রেম বুঝতে শিখেছি , যে ভাষায় রঞ্জন বাবু কে পড়েছি , যে ভাষায় চারুলতা দেখেছি সেই যে ভাষায় মা বলেছি – সেই বাংলা তে এতা লিখে ফেললাম । ধৃষ্টতা মার্জনীয় কিনতু যেহেতু অকাল পক্কতা যেহেতু রন্ধ্রে রন্ধ্রে, এখনও সুযোগ ছাড়া যায় না।
ফিরতে ফিরতে এই লাইন টা মনে পড়ে গেল – পৃথিবী আমার, শেষ পর্যন্ত নোঙর ফেলেছি মন কেমনেই । মেনে নিয়েছি একমাত্র মন কেমনের বন্ধন । এই দুপুর আমার জীবনে হয়ত আরেকটা আসবে না । মাধবী দি যাবার সময় সবাই কে আসছি বলে গেলেন , কোথাও থেকে এই গান টা ভেসে এলো – আরও দূরে চলো যাই ঘুরে আসি, মন নিয়ে কাছাকাছি তুমি আছ আমি আছি, কাছাকাছি পাশাপাশি ।
এই রুপলি ইতি কথা ইলিশের উৎসবে শুরু তে পাবেন ইলিশ ভাজা বা ইলিশের পীঠে – ৫৫০ /- করে , এছাড়াও আছে – কচু পাতায় মোড়া নারকেলি ইলিশ, বেগুন দিয়ে কাঁচা ইলিশের ঝাল, সরষে ইলিশ, আনারশি ইলিশ দুধ ইলিশ ইত্যাদি – প্রতিটি ৬৫০ /- করে… এছাড়াও একটা ইলিশ থালি পাওয়া যাবে ১১০০/- মুল্যে ।
রঞ্জন বাবু গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজো র লোভ টা সামলাতে পারলাম না । ভালো থাকবেন। আপনার মন কেমন নগরের, নাগরিকত্ব পাবার আশায় রইলাম ।